সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন নীতিমালা 2025

By G. Kibria

Published on:

সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন নীতিমালা 2025

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুবিধা, যা অবসরের পর জীবনযাত্রাকে সহজ করে। ২০২০ সালের পর সরকার পেনশন সংক্রান্ত কোনো সম্পূর্ণ নতুন নিয়ম জারি করেনি। তবে, বিদ্যমান নিয়মগুলোর সরলীকরণ এবং কিছু সংশোধনীর মাধ্যমে পেনশন ব্যবস্থা আরও সুষ্ঠু করা হয়েছে। এই লেখায় আমরা সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন নীতিমালা 2025, এর বিধান, পেনশন বিতরণের আইন, এবং বিভিন্ন চাকরিকালের জন্য পেনশনের হার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এই লেখাটি সহজ বাংলায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই সহজে বুঝতে পারেন।

সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন নীতিমালা 2025

পেনশন হলো সরকারি কর্মচারীদের অবসরের পর বা মৃত্যুর পর তাদের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা। এটি নিশ্চিত করে যে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী বা তাদের পরিবার আর্থিক সংকটে না পড়েন। ২০২০ সালে জারি করা “সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সরলীকরণ আদেশ, ২০২০” অনুযায়ী, পেনশন বিতরণ প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হয়েছে। এই আদেশটি ২০০৯ সালের নিয়মকে প্রতিস্থাপন করেছে।

পেনশন বিতরণের আইন

সরকারি পেনশন বিতরণ নিয়ন্ত্রিত হয় অর্থ বিভাগের ২৭-০১-২০০৯ তারিখের স্মারকলিপির মাধ্যমে। এই স্মারকলিপি “বেসামরিক সরকারি কর্মচারীদের পেনশন প্রদান ও প্রদান সম্পর্কিত নিয়ম/প্রক্রিয়ার আরও সরলীকরণ আদেশ, ২০০৯” নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে, ২০২০ সালে এটি সংশোধন করে “সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সরলীকরণ আদেশ, ২০২০” জারি করা হয়। এই আইন অনুসারে, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী বা তাদের পরিবার সময়মতো পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা পান।

মনোনয়ন না থাকলে যা হবে

যদি কোনো সরকারি কর্মচারী মনোনয়ন না করেন, তাহলে পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা তার পরিবারের নির্দিষ্ট সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এই ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত নিয়ম প্রযোজ্য:

  • প্রাপক: স্ত্রী, পুত্র এবং কন্যা পারিবারিক পেনশন, গ্র্যাচুইটি, জিপিএফ (জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ৮ লাখ টাকার অনুদান এবং যৌথ বীমার অর্থ সমান হারে পাবেন।
  • অপ্রাপক: পিতা, মাতা, ভাই এবং বোন এই সুবিধা পাবেন না।
  • শর্ত: পুত্র ও কন্যার খরচ মেটানোর জন্য এই সুবিধাগুলো স্ত্রীর নামে অনুমোদন করতে হবে।

চাকরি কালের উপর পেনশনের হার

পেনশনের হার নির্ধারিত হয় কর্মচারীর চাকরিকালের উপর ভিত্তি করে। ২০২৫ সালের নিয়ম অনুযায়ী, চাকরিকাল ৫ বছর থেকে শুরু করে ২৫ বছর পর্যন্ত পেনশন প্রযোজ্য। নিচের টেবিলে চাকরিকাল অনুযায়ী পেনশনের হার দেখানো হলো:

চাকরিকাল (বছর)পেনশনের হার (%)পূর্ববর্তী হার (%)
২১
২৪
২৭
৩০
৩৩
১০৩৬৩২
১১৩৯৩৫
১২৪৩৩৮
১৩৪৭৪২
১৪৫১৪৫
১৫৫৪৪৮
১৬৫৭৫১
১৭৬৩৫৪
১৮৬৫৫৮
১৯৬৯৬১
২০৭২৬৪
২১৭৫৬৭
২২৭৯৭০
২৩৮৩৭৪
২৪৮৭৭৭
২৫৯০৮০

১৫ বছর চাকরির পর পেনশনের উদাহরণ

ধরা যাক, জামাল নামের একজন কর্মচারীর মূল বেতন ১০৫ মাসে ১৬,০০০ টাকা। তিনি ১৫ বছর চাকরি করে মারা গেলে তার পরিবার নিম্নলিখিত সুবিধা পাবেন:

  • মাসিক পেনশন: ১৬,০০০ × ৫৪% = ৮,৬৪০ টাকা। এর অর্ধেক, অর্থাৎ ৪,৩২০ টাকা মাসিক পেনশন।
  • চক্ষু ভাতা: ১,৫০০ টাকা।
  • উৎসব ভাতা: বছরে দুটি উৎসব ভাতা এবং একটি বাংলা নববর্ষ ভাতা।
  • গ্র্যাচুইটি: ৪,৩২০ × ২৪৫ = ১০,৫৮,৪০০ টাকা (এককালীন)।
  • অন্যান্য সুবিধা: জিপিএফ এবং মৃত্যু ভাতা।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম

বর্তমানে যারা সরকারি, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় কর্মরত, তারা পেনশন পাবেন। তবে, কিছু স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় পেনশন ব্যবস্থা না থাকলেও, তারা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আসবে। এই স্কিমে কর্মচারী ও নিয়োগকর্তা প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দেবেন। চাকরির মেয়াদ শেষে সর্বজনীন পেনশন আইন অনুযায়ী পেনশন প্রদান করা হবে।

পেনশনযোগ্য চাকরির মেয়াদ

পেনশন পাওয়ের জন্য ন্যূনতম চাকরিকাল পূর্বে ১০ বছর ছিল, যা এখন কমিয়ে ৫ বছর করা হয়েছে। এই নিয়ম প্রতিবন্ধী, অযোগ্য বা মৃত কর্মচারীদের পরিবারের জন্য পারিবারিক পেনশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে, ৫ বছরের কম চাকরিকালে মৃত্যু হলে পরিবার কেবল তিনটি মৌলিক বেতন এবং জিপিএএফ জমা পাবে।

শেষ কথা

সরকারি পেনশন নিয়ম ২০২৫ সরকারি কর্মচারীদের অবসরকালীন জীবনকে আরও নিরাপদ করতে সাহায্য করছে। পেনশনের হার বৃদ্ধি, সরলীকরণ আদেশ, এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিম এই ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করেছে। এই লেখাতে দেওয়া তথ্য সরকারি কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের জন্য পেনশন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে।

আরও পড়ুন-

যেকোনো তথ্যের আপডেট সবার আগে জানার জন্য উত্তর বিডির সোসাল একাউন্টগুলো অনুসরণ করুন। ধন্যবাদ আপনাকে।

ফেসবুক পেজFollow Us
হোয়াটসএপJoin us
ইন্সটাগ্রামJoin us
মিডিয়ামJoin us

Leave a Comment