মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা। মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন।

By G. Kibria

Published on:

মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা।

এই লেখায় আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা ২০২৫ সম্পর্কে জানতে পারবেন। বাংলাদেশে অনেক দরিদ্র পরিবারের জন্য সংসার চালানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে, গর্ভবতী মায়েদের জন্য পুষ্টিকর খাবার ও সঠিক চিকিৎসার অভাবে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। টাকার অভাবে অনেক গর্ভবতী মা পুষ্টিকর খাবার খেতে পারেন না, যার ফলে জন্ম নেওয়া শিশুও পুষ্টিহীনতায় ভোগে।

Shyamnagar Tech Point এর ভিডিও থে আরও তথ্য জানুন।

এমনকি কিছু শিশু পুষ্টিহীনতার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ে। এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকার দরিদ্র ও অসহায় গর্ভবতী মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা কর্মসূচি চালু করেছে। এই ভাতার মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েরা নিজেদের এবং তাদের শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার ও সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারেন। এই লেখায় আমরা জানবো মাতৃত্বকালীন ভাতা কী, এটি কত টাকা, কীভাবে আবেদন করতে হয় এবং এর সুবিধাগুলো কী।

মাতৃত্বকালীন ভাতা হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, যা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র ও অসহায় গর্ভবতী মায়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা, যাতে তারা গর্ভকালীন সময়ে এবং শিশুর জন্মের পর পুষ্টিকর খাবার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারেন। এই ভাতা শিশুর জন্মের পর প্রথম কয়েক বছর পর্যন্ত মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা ২০২৫

বাংলাদেশ সরকার গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রতি মাসে ৮০০ টাকা মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করে। এই টাকা প্রতি ছয় মাস পরপর একসঙ্গে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, ছয় মাসে মোট ৪,৮০০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এই ভাতা মোট ২৪ মাস বা দুই বছর পর্যন্ত প্রদান করা হয়। তবে, দুটি সন্তানের ক্ষেত্রে এই ভাতা ৩৬ মাস বা তিন বছর পর্যন্ত দেওয়া হয়।

  • প্রতি মাসে ৮০০ টাকা × ৬ মাস = ৪,৮০০ টাকা (প্রতি ছয় মাসে)
  • ২৪ মাসে মোট = ৪,৮০০ টাকা × ৪ ধাপ = ১৯,২০০ টাকা
  • দুটি সন্তানের ক্ষেত্রে ৩৬ মাসে মোট = ২৮,৮০০ টাকা

এই অর্থ গর্ভবতী মা এবং তার শিশুর পুষ্টিকর খাবার, চিকিৎসা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ব্যবহার করা যায়।

মাতৃত্বকালীন ভাতা শুধু আর্থিক সহায়তাই নয়, এটি মা ও শিশুর জীবনমান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো।

  • পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতকরণ: গর্ভবতী মায়েরা পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারেন, যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
  • শিশুর সুস্থ বিকাশ: শিশুর জন্মের পর প্রথম কয়েক বছরে পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা যায়, যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।
  • চিকিৎসা সেবা: গর্ভকালীন এবং জন্মের পর চিকিৎসা খরচ মেটাতে এই টাকা ব্যবহার করা যায়।
  • আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য: দরিদ্র পরিবারের উপর আর্থিক চাপ কমে, যা পরিবারের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বাড়ায়।

মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার শর্ত

মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এই শর্তগুলো হলো:

  1. আবেদনকারীর বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছর হতে হবে।
  2. গর্ভধারণ প্রথম বা দ্বিতীয় সন্তানের জন্য হতে হবে।
  3. পরিবারের মাসিক আয় ১,৫০০ টাকার নিচে হতে হবে।
  4. গর্ভধারণের সময় কমপক্ষে ৫ মাস হতে হবে।
  5. আবেদনকারীকে দরিদ্র বা প্রতিবন্ধী মা হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
  6. আবেদনকারীর নির্দিষ্ট বাসস্থান বা বসতবাড়ি থাকতে হবে।

এই শর্তগুলো পূরণ করলে আবেদনকারী সহজেই ভাতার জন্য যোগ্য হবেন।

মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন

মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করা খুবই সহজ। আপনি অনলাইন বা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। নিচে আবেদনের ধাপগুলো দেওয়া হলো:

  1. ওয়েবসাইটে প্রবেশ: গুগল ক্রোমে গিয়ে “মাতৃত্বকালীন ভাতা” সার্চ করুন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
  2. ফরম সংগ্রহ: ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম ডাউনলোড করুন।
  3. ফরম পূরণ: ফরমে সঠিক তথ্য দিয়ে সব খালি জায়গা পূরণ করুন।
  4. কাগজপত্র জমা: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (নিচে উল্লেখ করা হয়েছে) সংযুক্ত করে ফরম জমা দিন।
  5. ইউনিয়ন পরিষদে জমা: পূরণকৃত ফরম ও কাগজপত্র ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিন।
  6. যাচাই প্রক্রিয়া: সরকারি কর্মকর্তারা আপনার তথ্য যাচাই করবেন। সঠিক হলে আবেদন অনুমোদিত হবে।

ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সরাসরি ফরম সংগ্রহ করুন। ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে ৪০ টাকা ফি দিতে হতে পারে।

মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়

মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

  • সরকারি হাসপাতাল থেকে গর্ভধারণের মেডিকেল রিপোর্টের কপি।
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) ফটোকপি।
  • পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
  • সচল মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর।

এই কাগজপত্রগুলো সঠিকভাবে জমা দিলে আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে।

শিশু ভাতা ২০২৫

মাতৃত্বকালীন ভাতার পাশাপাশি শিশুদের জন্যও আলাদা ভাতা প্রদান করা হয়। ২০০৭-০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে কাজ করে। শিশু ভাতার পরিমাণও মাতৃত্বকালীন ভাতার মতোই, অর্থাৎ প্রতি মাসে ৮০০ টাকা, যা ছয় মাস পরপর ৪,৮০০ টাকা হিসেবে প্রদান করা হয়। এই ভাতা ২৪ মাস পর্যন্ত দেওয়া হয়।

মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা সোনালী ব্যাংক এর মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পাঠানো হয়। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আবেদন যাচাই করে অনুমোদনের পর টাকা বিতরণ করা হয়। প্রতিটি ভাতাভোগী নিশ্চিত করা হয় যাতে তারা নিয়মিত এবং সঠিকভাবে টাকা পান।

মাতৃত্বকালীন ভাতা শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, এটি দরিদ্র মায়েদের জীবনে আশার আলো জ্বালায়। এই ভাতার মাধ্যমে মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য একটি সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে পারেন। এছাড়া, এটি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দারিদ্র্য নিরসনে কাজ করে।

উপসংহার

মাতৃত্বকালীন ভাতা বাংলাদেশের দরিদ্র ও অসহায় গর্ভবতী মায়েদের জন্য একটি অমূল্য সহায়তা। এই ভাতার মাধ্যমে মা ও শিশুর পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব। আপনি যদি এই ভাতার জন্য যোগ্য হন, তাহলে দ্রুত আবেদন করুন এবং সরকারি সুবিধা গ্রহণ করুন। এই লেখাটি পড়ে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার আশেপাশের মানুষের সঙ্গে শেয়ার করুন।

যেকোনো তথ্যের আপডেট সবার আগে জানার জন্য উত্তর বিডির সোসাল একাউন্টগুলো অনুসরণ করুন। ধন্যবাদ আপনাকে।

ফেসবুক পেজFollow Us
হোয়াটসএপJoin us
ইন্সটাগ্রামJoin us
মিডিয়ামJoin us

Leave a Comment