ব্যাংক হল এমন একটি জায়গা যেখানে মানুষ তাদের টাকা-পয়সা নিরাপদে জমা রাখতে পারে, প্রয়োজনে ঋণ নিতে পারে, এবং অন্যান্য আর্থিক কাজকর্ম করতে পারে। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি দুই ধরনের ব্যাংকই আছে। তবে সরকারি ব্যাংকগুলো দেশের সব অঞ্চলের মানুষের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই লেখায় আমরা বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংক কয়টি, সেগুলোর নাম, কাজ এবং অন্যান্য দরকারি তথ্য নিয়ে সহজ ভাষায় আলোচনা করব। এই লেখাটি পড়লে তুমি বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলোর তালিকা,বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংক এর তালিকা সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে পারবেন।
বাংলাদেশে সরকারি ব্যাংক কয়টি ও কি কি
বাংলাদেশে মোট ৯টি সরকারি ব্যাংক আছে। এই ব্যাংকগুলো সরকারের মালিকানাধীন, মানে সরকার এগুলো চালায়। এই ৯টি ব্যাংকের মধ্যে ৬টি হল বাণিজ্যিক ব্যাংক, যেগুলোকে তফসিলি ব্যাংকও বলা হয়। আর বাকি ৩টি হল বিশেষ কাজের জন্য তৈরি ব্যাংক, যেগুলোকে বিশেষায়িত ব্যাংক বলে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তুমি তোমার টাকা জমা রাখতে পারবে, ঋণ নিতে পারবে, চেকের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবে। আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো তৈরি হয়েছে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রের উন্নতির জন্য, যেমন – কৃষি বা প্রবাসীদের সাহায্য করা।
বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলোর তালিকা
এখানে বাংলাদেশের ৯টি সরকারি ব্যাংকের নাম দেওয়া হলো
1.Sonali Bank Limited
2. Janata Bank Limited
3. Agrani Bank Limited
4. Rupali Bank Limited
5. Bangladesh Development Bank Limited (BDBL)
6. BASIC Bank Limited
7. Bangladesh Krishi Bank
8. Rajshahi Krishi Unnayan Bank (RAKUB)
9. Probashi Kallyan Bank
তফসিলি সরকারি ব্যাংক (এগুলো বাণিজ্যিক ব্যাংক):
১. সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
২. জনতা ব্যাংক লিমিটেড
৩. অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড
৪. রূপালী ব্যাংক লিমিটেড
৫. বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)
৬. বেসিক ব্যাংক লিমিটেড
বিশেষায়িত সরকারি ব্যাংক:
১. বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
২. রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)
৩. প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (BKB) হলো বাংলাদেশের একটি বিশেষায়িত সরকারি ব্যাংক। এই ব্যাংকটি মূলত বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে কাজ করে। এটি কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়, কৃষি উপকরণ কিনতে সাহায্য করে এবং কৃষি বিষয়ক পরামর্শ দেয়। সরকারি ব্যাংক গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি ব্যাংক।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়:-
- সরকারি ব্যাংক: এই ব্যাংকগুলোর মালিক সরকার। সরকার এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের উন্নয়নে এই ব্যাংকগুলোর অনেক ভূমিকা আছে।
- বেসরকারি ব্যাংক: এই ব্যাংকগুলোর মালিক সাধারণ মানুষ বা কোনো কোম্পানি। এই ব্যাংকগুলোও দেশের অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখে, তবে এদের প্রধান লক্ষ্য হলো লাভ করা।
এছাড়া, আরও কয়েক ধরনের ব্যাংক বাংলাদেশে আছে, যেমন:
- বিদেশি ব্যাংক: এই ব্যাংকগুলোর প্রধান অফিস অন্য দেশে থাকে, কিন্তু বাংলাদেশে শাখা খুলে ব্যবসা করে।
- ইসলামী ব্যাংক: এই ব্যাংকগুলো ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী চলে
সরকারি ব্যাংক কত প্রকার ও কি কি
বাংলাদেশে সরকারি ব্যাংক মূলত দুই প্রকার: তফসিলি ব্যাংক এবং বিশেষায়িত ব্যাংক। তফসিলি ব্যাংকগুলো সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত এবং এর নিয়মকানুন মেনে চলে। আচ্ছা আমাদের প্রশ্ন হলো যে সরকারি ব্যাংক কয়টি? বাংলদেশে বর্তমানে মোট ৬টি সরকারি তফসিলি ব্যাংক রয়েছে। এগুলো হলো: সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) এবং বেসিক ব্যাংক লিমিটেড। এই ব্যাংকগুলো আমানত গ্রহণ, ঋণ প্রদান, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়সহ বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে।
অন্যদিকে, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে তিনটি সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংক রয়েছে: বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কৃষি ঋণ প্রদান করে, রাকাব রাজশাহী বিভাগের কৃষকদের জন্য কাজ করে, এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রবাসীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। ব্যাংক কার্যক্রম এই ব্যাংকগুলো দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
তফসিলি ব্যাংক কয়টি ও কি কি?
তফসিলি ব্যাংক মানে হলো সেই ব্যাংকগুলো, যেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে চলে। এই ব্যাংকগুলোতেই তুমি তোমার টাকা জমা রাখতে পারবে, চেক বই ব্যবহার করতে পারবে, বা ঋণ নিতে পারবে। উপরে যে ৬টি সরকারি ব্যাংকের নাম বলা হয়েছে, সেগুলো সবই তফসিলি ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো হলো: সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), এবং বেসিক ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো টাকা জমা নেওয়া, ঋণ দেওয়া, বিদেশ থেকে টাকা আনা-নেওয়া, অনলাইন ব্যাংকিং-সহ অনেক ধরনের কাজ করে। দেশের প্রায় সব জায়গাতেই এদের শাখা আছে।
বিশেষায়িত ব্যাংক কয়টি ও কি কি?
বাংলাদেশে তিনটি বিশেষায়িত সরকারি ব্যাংক আছে। এই ব্যাংকগুলো বিশেষ কিছু কাজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই তিনটি ব্যাংক হলো:
১. বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক: এই ব্যাংকটি কৃষকদের সাহায্য করার জন্য তৈরি হয়েছে। এটি কৃষকদের কম সুদে ঋণ দেয়, চাষাবাদের জন্য জিনিসপত্র কিনতে সাহায্য করে, এবং চাষাবাদ সম্পর্কে পরামর্শ দেয়।
২. রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব): এই ব্যাংকটিও কৃষকদের সাহায্য করে, তবে এটি রাজশাহী বিভাগের কৃষকদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি।
৩. প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক: এই ব্যাংকটি যারা বিদেশে কাজ করে তাদের সাহায্য করার জন্য তৈরি হয়েছে। এটি বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো সহজ করে, বিদেশে যাওয়ার জন্য ঋণ দেয় এবং প্রবাসীদের নানাভাবে সাহায্য করে।
বিশেষায়িত ব্যাংকের কাজ কি
বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মতো নয়। এগুলো তৈরি করা হয় বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য পূরণের জন্য।তিনটি সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংক রয়েছে: বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলোর মূল কাজ হলো নির্দিষ্ট খাতে উন্নয়ন করা।
- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক: এই ব্যাংক কৃষকদের ঋণ দেয়, চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে সাহায্য করে এবং কৃষি বিষয়ে পরামর্শ দেয়। এর মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নতি করা।
- রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব): এই ব্যাংকটিও কৃষি ব্যাংক এর মতোই, তবে এটি রাজশাহী বিভাগের কৃষকদের জন্য বিশেষভাবে কাজ করে।
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক: এই ব্যাংক যারা বিদেশে কাজ করেন তাদের সাহায্য করে। এটি বিদেশ থেকে সহজে টাকা পাঠাতে সাহায্য করে, বিদেশে যাওয়ার জন্য ঋণ দেয় এবং প্রবাসীদের বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা দেয়। সরকারি ব্যাংক সংখ্যা
সহজ কথায়, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো দেশের কোনো একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের উন্নতির জন্য কাজ করে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সরকারি ব্যাংক কোনটি?
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সরকারি ব্যাংক হলো সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। এই ব্যাংকের শাখা, জমা টাকার পরিমাণ, এবং গ্রাহক সংখ্যা অন্য সব সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেশি। সোনালী ব্যাংক ১৯৭২ সালে তৈরি হয়। তখন থেকেই এটি বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবসার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এখন (২০২৫ সাল) সোনালী ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ১২০০-এর বেশি। এই ব্যাংক শহর এবং গ্রাম, সব জায়গার মানুষের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিদেশেও সোনালী ব্যাংকের শাখা আছে, যা বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতে সাহায্য করে।
সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক কয়টি?
বাংলাদেশে সরকারের মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ৬টি। এগুলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকও বলা হয়। এই ব্যাংকগুলো অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মতোই সব ধরনের ব্যাংকিং কাজ করে। কিন্তু এগুলোর মালিক সরকার হওয়ার কারণে, এদের কাজের মধ্যে সরকারি নীতির প্রভাব দেখা যায়।
সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাজ কি
সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো, যেমন – সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) এবং বেসিক ব্যাংক, অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মতোই বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। এই ব্যাংকগুলো দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- আমানত সংগ্রহ: জনগণের কাছ থেকে বিভিন্ন মেয়াদে টাকা জমা রাখা।জনগণকে মুনাফা দেয়
- ঋণ প্রদান: ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন প্রয়োজনে ঋণ দেওয়া, যেমন – গৃহঋণ, শিক্ষা ঋণ, ব্যবসা ঋণ ইত্যাদি।
- বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন: বিদেশ থেকে টাকা আনা ও পাঠানো।
- অর্থনৈতিক কার্যক্রমে সহায়তা: দেশের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য খাতে অর্থ সরবরাহ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করা।
- বিভিন্ন প্রকার ঋণ দেওয়া:বিভিন্ন খাতে ঋণ প্রদান করা।
সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নাম কি?
এখানে সরকারের মালিকানাধীন ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের নাম দেওয়া হলো:
১. সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
২. জনতা ব্যাংক লিমিটেড
৩. অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড
৪. রূপালী ব্যাংক লিমিটেড
৫. বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)
৬. বেসিক ব্যাংক লিমিটেড
লেখকের শেষ কথা
বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলো দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই জরুরি। এই ব্যাংকগুলো শুধু টাকা-পয়সার লেনদেন করে না, দেশের গরিব মানুষের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখে। এই লেখায় বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলোর নাম, কাজ, এবং ধরন সম্পর্কে সহজ ভাষায় বলা হয়েছে।
আশা করি, এই তথ্যগুলো তোমার কাজে লাগবে এবং সরকারি ব্যাংক সম্পর্কে তোমার ধারণা পরিষ্কার হবে। তোমার যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে বাংলাদেশে সরকারি ব্যাংক কয়টি ও কি কি নিয়ে, নিচে কমেন্ট করে জানাও।আসা করি আজকের এই আর্টিকেলটা আপনাদের কাজে আসবে।
আরও পড়ুন-
যেকোনো তথ্যের আপডেট সবার আগে জানার জন্য উত্তর বিডির সোসাল একাউন্টগুলো অনুসরণ করুন। ধন্যবাদ আপনাকে।