সুইফট কোড কিভাবে বের করব ও সুইফট কোড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

By G. Kibria

Published on:

সুইফট কোড কিভাবে বের করব,সুইফট কোডের সংখ্যা কত

অনেকেই হয়তো সুইফট কোড এই নামটা শুনেছি। কিন্তু সুইফট কোড আসলে কি, কেন এটা লাগে, কিভাবে এটা বের করতে হয়, swift code কিভাবে পাবো এই বিষয়গুলো অনেকের কাছেই অজানা। বিশেষ করে যারা অনলাইনে বিদেশ থেকে টাকা আনেন অথবা বিদেশে টাকা পাঠান, তাদের জন্য সুইফট কোড অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা সহজ ভাষায় সুইফট কোড কিভাবে বের করব , সুইফট কোডের সংখ্যা কত টা জানবো। এছাড়াও সুইফট কোডের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করবো।তো চলুন শুরু করা যাক আর আর্টিকেল টি শেষ পর্যন্ত পড়লে আসা করি আপনার এই সম্পর্কিত আর কোনো প্রশ্ন থাকবেনা

Table of Contents

সুইফট কোড কি

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, সুইফট কোড হলো একটি বিশেষ কোড যা দিয়ে আপনি বিশ্বের যেকোনো ব্যাংক শনাক্ত করতে পারবেন। এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যাংক শনাক্তকারী কোড যা SWIFT (Society for Worldwide Interbank Financial Telecommunication) নামক একটি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়। এই কোডটি BIC (Bank Identifier Code) নামেও পরিচিত।

ধরুন, আপনি বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার একটি ব্যাংকে টাকা পাঠাতে চান। এক্ষেত্রে, আপনাকে সেই আমেরিকান ব্যাংকের সুইফট কোড জানতে হবে। সুইফট কোড ছাড়া আপনি সেই ব্যাংকে টাকা পাঠাতে পারবেন না। কারণ, সুইফট কোড দিয়েই বোঝা যায় টাকা কোন ব্যাংকে যাচ্ছে।

সুইফট কোডের সংখ্যা কত

একটি সুইফট কোডে সাধারণত ৮ টি অথবা ১১ টি অক্ষর থাকে।

  • ৮ অক্ষরের কোড: এই ধরণের কোডে প্রথম ৪ টি অক্ষর ব্যাংকের নাম নির্দেশ করে, পরের ২ টি অক্ষর দেশের নাম নির্দেশ করে এবং শেষ ২ টি অক্ষর ব্যাংকের অবস্থান নির্দেশ করে।
  • ১১ অক্ষরের কোড: এই ধরণের কোডে প্রথম ৮ টি অক্ষর একই রকম থাকে (ব্যাংকের নাম, দেশের নাম এবং অবস্থান)। অতিরিক্ত ৩ টি অক্ষর দিয়ে ব্যাংকের কোন শাখায় টাকা যাচ্ছে তা বোঝা যায়।

সুইফট কোড কিভাবে বের করব – swift code কিভাবে পাবো

বিদেশ থেকে অথবা বিদেশে টাকা পাঠাবেন আপনার মাথায় কি প্রশ্ন জাগেনা সুইফট কোড কিভাবে বের করব, চাইলে অনেক সহজেই যেকোনো ব্যাংকের সুইফট কোড বের করতে পারবেন। সুইফট কোড খুঁজে পাওয়ার পদ্ধতি গুলো হলো:

  • ব্যাংকের ওয়েবসাইট: প্রায় সব ব্যাংকই তাদের ওয়েবসাইটে সুইফট কোড দিয়ে রাখে। আপনি যে ব্যাংকের সুইফট কোড চান, সেই ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে “About Us” অথবা “Contact Us” পেজে সুইফট কোডটি পেয়ে যাবেন।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট: আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্টেও সুইফট কোড লেখা থাকে। আপনার হাতে যদি ব্যাংক স্টেটমেন্ট থাকে, তাহলে সেখান থেকেও আপনি সুইফট কোড জেনে নিতে পারবেন।
  • অনলাইনে সার্চ: আপনি গুগলে সার্চ করেও সুইফট কোড বের করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি “ডাচ বাংলা ব্যাংকের সুইফট কোড” লিখে সার্চ করেন, তাহলে গুগল আপনাকে সেই কোডটি দেখাবে। এছাড়াও অনেক ওয়েবসাইট আছে যেগুলো বিভিন্ন ব্যাংকের সুইফট কোড দিয়ে রাখে।
  • ব্যাংকে যোগাযোগ: আপনি চাইলে সরাসরি ব্যাংকে যোগাযোগ করেও সুইফট কোড জেনে নিতে পারেন। ব্যাংকে ফোন করে অথবা ব্যাংকে গিয়ে আপনি সুইফট কোড সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

সুইফট কোড কিভাবে কাজ করে

সুইফট কোড কিভাবে কাজ করে তা বুঝতে, চলুন একটা সহজ উদাহরণ দেখি। ধরুন, আপনি ঢাকার একটি ব্যাংক থেকে লন্ডনের আপনার বন্ধুর কাছে টাকা পাঠাতে চান।

প্রথমে, আপনার ব্যাংক আপনার প্রদান করা তথ্য (যেমন, আপনার বন্ধুর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্যাংকের নাম, এবং সুইফট কোড) একটি নিরাপদ SWIFT মেসেজে রূপান্তর করবে।

এই মেসেজে আপনার বন্ধুর ব্যাংকের সুইফট কোড থাকবে যা লন্ডনের কোন ব্যাংকে টাকা যাবে তা চিহ্নিত করবে। সুইফট কোড একটি ব্যাংকের ঠিকানার মতো কাজ করে, যা বিশ্বব্যাপী অন্যান্য ব্যাংকগুলিকে সেই নির্দিষ্ট ব্যাংক শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

এরপর, আপনার ব্যাংক এই মেসেজ SWIFT নেটওয়ার্কের মাধ্যমে লন্ডনের ব্যাংকে পাঠাবে। SWIFT নেটওয়ার্ক একটি নিরাপদ এবং বিশ্বস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা যা বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলোর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করে।

লন্ডনের ব্যাংক SWIFT মেসেজ গ্রহণ করে সুইফট কোড ব্যবহার করে টাকা গ্রহণকারী শনাক্ত করবে এবং আপনার বন্ধুর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করবে।

সুইফট কোড ব্যবহার করার ফলে আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেন দ্রুত, নিরাপদ এবং সঠিক হয়। এটি ভুল ব্যাংকে টাকা পাঠানোর ঝুঁকি কমায় এবং লেনদেন সহজ করে।

সুইফট কোড কি কাজে লাগে?

সুইফট কোড মূলত আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা হয়। সুইফট কোড এর ব্যাংকিং এ ব্যবহার অনেক। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হলো:

  • বিদেশে টাকা পাঠানো: আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠাতে চান, তাহলে আপনাকে সেই বিদেশী ব্যাংকের সুইফট কোড জানতে হবে।
  • বিদেশ থেকে টাকা আনা: আপনি যদি বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা আনতে চান, তাহলে আপনাকে আপনার বাংলাদেশী ব্যাংকের সুইফট কোড জানতে হবে।
  • আন্তর্জাতিক ব্যবসা: আন্তর্জাতিক ব্যবসার ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনের জন্য সুইফট কোড অপরিহার্য।

সুইফট কোড ব্যবহার করলে আপনার টাকা সঠিক ব্যাংকে এবং সঠিক ব্যক্তির কাছে পৌঁছাবে এবং সুইফট কোড যাচাই করার পদ্ধতি থাকায় আপনার লেনদেন নিরাপদ থাকবে।

সুইফট কোড কত প্রকার ও কি কি?

সুইফট কোড মূলত একই রকম। তবে এটি দুটি নামে পরিচিত:

  • BIC (Bank Identifier Code): এটি সুইফট কোডের আরেকটি নাম।
  • SWIFT Code: এটি সুইফট কোডের সাধারণ নাম।

উভয় নামই একই কোডকে নির্দেশ করে।শুধু মনে নামে আলাদা

বিভিন্ন ব্যাংক এর সুইফট কোড জেনে নিন

এখানে কিছু জনপ্রিয় বাংলাদেশী ব্যাংকের সুইফট কোড দেওয়া হলো:

ডাচ বাংলা ব্যাংকের সুইফট কোড কি?

ডাচ বাংলা ব্যাংকের সুইফট কোড হলো DBBLBDDH। তবে মনে রাখবেন, প্রতিটি শাখার জন্য কোডের শেষে ৩ টি অতিরিক্ত অক্ষর থাকবে। ডাচ বাংলা ব্যাংকের সুইফট কোড বের করার উপায় কি? আপনি ডাচ বাংলা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে সুইফট কোড অনুসন্ধান করতে পারেন অথবা ব্যাংকে যোগাযোগ করতে পারেন।

সোনালী ব্যাংকের সুইফট কোড কি?

সোনালী ব্যাংকের সুইফট কোড হলো SONALIBD। আপনি সোনালী ব্যাংকের ওয়েবসাইট অথবা ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে সোনালী ব্যাংকের সুইফট কোড জেনে নিতে পারেন।

পূবালী ব্যাংক এর সুইফ্ট কোড কি?

পূবালী ব্যাংকের সুইফট কোড হলো PUBALIBD। পূবালী ব্যাংক এর সুইফ্ট কোড খুঁজে পাওয়ার পদ্ধতি সোনালী ব্যাংকের মতোই। আপনি ব্যাংকের ওয়েবসাইট অথবা ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে কোডটি পেতে পারেন।

অগ্রণী ব্যাংক এর সুইফ্ট কোড কি?

অগ্রণী ব্যাংকের সুইফট কোড হলো AGRNIBDD। অগ্রণী ব্যাংক এর সুইফ্ট কোড কোথায় পাব? ব্যাংকের ওয়েবসাইটে “Contact Us” পৃষ্ঠায় অথবা ব্যাংক স্টেটমেন্টে কোডটি উল্লেখ থাকবে।

ইসলামী ব্যাংকের সুইফট কোড কি?

ইসলামী ব্যাংকের সুইফট কোড হলো IBBLBDDH। ইসলামী ব্যাংকের সুইফট কোড যাচাই করার পদ্ধতি হিসেবে আপনি ব্যাংকের ওয়েবসাইট অথবা কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করতে পারেন।

অনলাইন এ সুইফট কোড বের করার নিয়ম

।অনলাইন এ swift কোড বের করার কিছু পদ্ধতি রয়েছে।নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইট এই সার্ভিস ফ্রী তেই প্রদান করে থাকে।তারমধ্যে wise banking ফ্রিতেই তাদের ওয়েবসাইটে সুইফট্ কোড পাওয়ার বেবস্থা করে দিয়েছে।এখন আমাদের পালা সুইফট কোড টি সংগ্রহ করা।Wise এর মাধ্যমে সুইফট কোড খুঁজে বের করার জন্য নিচের ধাপগুলো ফলো করুন:

ধাপ ১: Wise এর ওয়েবসাইটে যান

প্রথমে, আপনার ব্রাউজারে Wise এর ওয়েবসাইট (bank.codes) খুলুন।

সুইফট কোড কিভাবে বের করব,সুইফট কোডের সংখ্যা কত

ধাপ ৩:দেশের নাম, ব্যাংকের নাম এবং শাখার নাম প্রদান করুন

এরপর, আপনার দেশের নাম, ব্যাংকের নাম এবং শাখার নাম প্রদান করুন।

সুইফট কোড কিভাবে বের করব,সুইফট কোডের সংখ্যা কত

ধাপ ৪: সার্চ করুন

সব তথ্য প্রদান করার পর, “Search” বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৫: সুইফট কোড যাচাই করুন

সার্চ করার পর, tool টি আপনাকে সুইফট কোড দেখাবে। সুইফট কোডটি সঠিক কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিন। আপনি চাইলে ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা কাস্টমার সেবা থেকে সুইফট কোডটি যাচাই করতে পারেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • Wise সব ব্যাংকের সুইফট কোড প্রদান করতে পারে না। কিছু ক্ষেত্রে, আপনাকে অন্য কোন উৎস থেকে সুইফট কোড খুঁজে বের করতে হতে পারে।
  • সুইফট কোড কেস সেনসিটিভ। তাই সুইফট কোড লিখার সময় বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করুন।
  • অর্থ প্রেরণ করার আগে সব তথ্য ভালোভাবে যাচাই করে নিন। ভুল তথ্য দিলে আপনার টাকা হারিয়ে যেতে পারে।

SWIFT Code Search & Finder Tools ব্যবহার করে সহজেই সুইফট কোড বের করা যায়। এই tools গুলো আপনার সময় বাঁচায় এবং সঠিক সুইফট কোড নিশ্চিত করে। আশা করি, আপনাদের কাজে লাগবে।

সুইফট কোড এর ব্যাংকিং এ ব্যবহার

সুইফট কোড ব্যাংকিং ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনকে সহজ, দ্রুত এবং নিরাপদ করে তোলে। সুইফট কোড ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে অর্থ পাঠাতে এবং গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়াও, ব্যক্তিগত লেনদেনের ক্ষেত্রেও সুইফট কোড ব্যবহার করা হয়।

লেখকের শেষ কথা

আশা করি, এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা সুইফট কোড কিভাবে বের করবেন তা জানতে পেরেছেন। সুইফট কোডের সংখ্যা কত এবং এটি কি কাজে লাগে তাও আপনারা বুঝতে পেরেছেন। মনে রাখবেন, আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে সঠিক সুইফট কোড ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোন লেনদেন করার আগে অবশ্যই সুইফট কোড চেক করার পদ্ধতি গুলি অনুসরণ করুন এবং সঠিক কোডটি ব্যবহার করুন। আশা করি আপনাদের আজকের আর্টিকেল টি নূন্যতম হলেও উপকার করেছেন।এমন আরও তথ্যবহুল আর্টিকল পেতে প্রদিন আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন।

সুইফট কোড সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর(Faqs)

সুইফট কোড কি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য প্রয়োজন?

হ্যাঁ, সুইফট কোড প্রধানত আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়। দেশের ভেতরে অর্থ লেনদেনের জন্য সাধারণত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং রাউটিং নম্বর ব্যবহার করা হয়।

আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সুইফট কোড কি সবসময় একই থাকে?

হ্যাঁ, আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সুইফট কোড সবসময় একই থাকে। তবে, আপনি যদি অন্য কোন শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলেন, তাহলে সেই শাখার জন্য আলাদা সুইফট কোড থাকবে।

সুইফট কোড এবং IBAN নম্বরের মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে?

হ্যাঁ, সুইফট কোড এবং IBAN নম্বর দুটি আলাদা জিনিস। সুইফট কোড একটি ব্যাংককে শনাক্ত করে, IBAN নম্বর একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টকে শনাক্ত করে। IBAN নম্বর সাধারণত আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এতে ব্যাংকের সুইফট কোড অন্তর্ভুক্ত থাকে।

ভুল সুইফট কোড ব্যবহার করলে কি হবে?

ভুল সুইফট কোড ব্যবহার করলে আপনার লেনদেন বাতিল হতে পারে অথবা আপনার টাকা ভুল ব্যাংকে পৌঁছে যেতে পারে। তাই অর্থ প্রেরণ করার আগে সবসময় সুইফট কোড ভালোভাবে যাচাই করে নিন।

যেকোনো তথ্যের আপডেট সবার আগে জানার জন্য উত্তর বিডির সোসাল একাউন্টগুলো অনুসরণ করুন। ধন্যবাদ আপনাকে।

ফেসবুক পেজFollow Us
হোয়াটসএপJoin us
ইন্সটাগ্রামJoin us
মিডিয়ামJoin us

Leave a Comment