আপনি এই লেখাটি পড়ে প্রিন্টার মেশিনের দাম কত এই বিষয়ে জানতে পারবেন বিস্তারিত। প্রিন্টার এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। অফিস, আদালত, দোকান, এমনকি ব্যক্তিগত কাজের জন্যও প্রিন্টারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশে, যেখানে কাগজপত্রের ফটোকপি, স্ক্যান, এবং প্রিন্টের প্রয়োজনীয়তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে একটি ভালো মানের প্রিন্টার কেনা এখন অনেকেরই প্রয়োজন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রিন্টার মেশিনের দাম কত? কোন ব্র্যান্ডের প্রিন্টার কিনবেন? স্ক্যানার সহ প্রিন্টার নাকি শুধু সাদা-কালো প্রিন্টার? এই সংবাদ প্রবন্ধে আমরা বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রিন্টারের দাম, তাদের বৈশিষ্ট্য, এবং কেনার আগে কী কী বিষয় মাথায় রাখবেন তা বিস্তারিত আলোচনা করব।
বাংলাদেশে প্রিন্টারের চাহিদা বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, অফিস এবং আদালতের কাগজপত্রের জন্য প্রিন্টার অপরিহার্য। দ্বিতীয়ত, ছোট ছোট দোকানে কাস্টমারদের জন্য ফটোকপি এবং প্রিন্ট সেবা দেওয়ার জন্য প্রিন্টারের প্রয়োজন হয়। তৃতীয়ত, শিক্ষার্থী এবং ব্যক্তিগত কাজের জন্যও প্রিন্টার ব্যবহার বাড়ছে।
এছাড়া, স্ক্যানার সহ প্রিন্টার এবং ওয়্যারলেস প্রিন্টার এর মতো আধুনিক প্রযুক্তির প্রিন্টার বাজারে এসেছে, যা মানুষের কাজকে আরও সহজ করছে। তবে, প্রিন্টার কেনার আগে সঠিক দাম এবং ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রিন্টার মেশিনের দাম কত ২০২৫
বাংলাদেশে প্রিন্টারের দাম নির্ভর করে ব্র্যান্ড, মডেল, এবং বৈশিষ্ট্যের উপর। সাধারণত, প্রিন্টারের দাম ৮,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৯৫,০০০ টাকা বা তার বেশি পর্যন্ত। উন্নত মানের প্রিন্টার, যেমন ফটো প্রিন্টার বা স্ক্যানার সহ প্রিন্টার, এর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। আগের তুলনায় প্রিন্টারের দাম গত কয়েক বছরে ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা বেড়েছে। তাই, কেনার আগে বাজার মূল্য যাচাই করা জরুরি।
যারা ছোট দোকান বা ব্যক্তিগত কাজের জন্য সাধারণ প্রিন্টার খুঁজছেন, তাদের জন্য সাদা-কালো প্রিন্টার একটি ভালো বিকল্প। এই ধরনের প্রিন্টারের দাম সাধারণত ৬,০০০ টাকা থেকে ৮,০০০ টাকার মধ্যে থাকে। সাদা-কালো প্রিন্টারে রঙিন প্রিন্টের তুলনায় খরচ কম হয়, এবং এটি ছোট প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই উপযোগী।
স্ক্যানার সহ প্রিন্টারের দাম

আধুনিক প্রিন্টারগুলোতে শুধু প্রিন্টই নয়, ফটোকপি এবং স্ক্যান করার সুবিধাও থাকে। স্ক্যানার সহ প্রিন্টার বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়, কারণ এটি একটি মেশিনে একাধিক কাজ করতে পারে। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় স্ক্যানার সহ প্রিন্টারের বর্তমান দাম দেওয়া হলো:
- HP Smart Tank 500 All-in-One Printer: ১৫,৫০০ টাকা
- HP Smart Tank 515 Wireless All-in-One Printer: ১৬,০০০ টাকা
- Brother DCP-T720DW Printer: ২৮,৫০০ টাকা
- Xerox B230 A4 Mono Laser Printer: ২৯,৫০০ টাকা
- Epson L805 Wireless Photo Ink Tank Printer: ৩৮,৩০০ টাকা
- Epson EcoTank L18050 Wi-Fi Photo Printer: ৬৭,৭০০ টাকা
এই প্রিন্টারগুলোর দাম কোয়ালিটি এবং বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়্যারলেস প্রিন্টার বা ফটো প্রিন্টিংয়ের জন্য উন্নত মডেলের দাম বেশি।
ইপসন প্রিন্টারের দাম

ইপসন প্রিন্টার বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয়। এর প্রধান কারণ হলো ইপসন প্রিন্টার দিয়ে ছবি, ফটোকপি, এবং স্ক্যান খুব পরিষ্কার এবং উচ্চমানের হয়। অফিস, আদালত, এবং দোকানে এই প্রিন্টারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে ইপসন প্রিন্টারের দাম ২,০০০ টাকা বেড়েছে। নিচে কয়েকটি ইপসন প্রিন্টারের দাম দেওয়া হলো:
- Epson L805 Wireless Photo Ink Tank Printer: ৩৮,৩০০ টাকা
- Epson EcoTank L18050 Wi-Fi Photo Printer: ৬৭,৭০০ টাকা
ইপসন প্রিন্টার কেনার আগে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী মডেল বেছে নিন। যদি আপনি ফটো প্রিন্টিংয়ের জন্য প্রিন্টার খুঁজেন, তাহলে ইপসনের এই মডেলগুলো খুব ভালো।
ক্যানন প্রিন্টারের দাম

ক্যানন প্রিন্টার আরেকটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। এই প্রিন্টারগুলো দীর্ঘস্থায়ী এবং ভালো সার্ভিস দেয়। বাংলাদেশে ক্যানন প্রিন্টারের দাম ৭,৮০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৯৭,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ক্যানন প্রিন্টারের দামও কোয়ালিটি এবং বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ মডেলের দাম কম, কিন্তু উন্নত ফটো প্রিন্টার বা স্ক্যানার সহ প্রিন্টারের দাম বেশি।
প্রিন্টার কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। এতে আপনি আপনার বাজেট এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক প্রিন্টার বেছে নিতে পারবেন। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো:
- প্রয়োজন নির্ধারণ করুন: আপনি কি শুধু সাদা-কালো প্রিন্ট করবেন, নাকি রঙিন প্রিন্ট বা স্ক্যানারের প্রয়োজন? আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী প্রিন্টার বেছে নিন।
- ব্র্যান্ড নির্বাচন: ইপসন, ক্যানন, এইচপি, এবং ব্রাদার ব্র্যান্ডের প্রিন্টার বাংলাদেশে জনপ্রিয়। এদের সার্ভিস এবং স্থায়িত্ব ভালো।
- বাজেট নির্ধারণ: প্রিন্টারের দাম ৬,০০০ টাকা থেকে ৯৫,০০০ টাকার বেশি হতে পারে। তাই আপনার বাজেট ঠিক করুন।
- বাজার মূল্য যাচাই: কিছু দোকানদার প্রিন্টারের দাম বেশি নিতে পারে। তাই অনলাইন এবং অফলাইন বাজারে দাম তুলনা করুন।
- ওয়ারেন্টি এবং সার্ভিস: প্রিন্টার কেনার সময় ওয়ারেন্টি এবং সার্ভিস সেন্টার সম্পর্কে জেনে নিন।
বাংলাদেশে প্রিন্টার কেনার জন্য অনলাইন এবং অফলাইন দুই ধরনের বিকল্প রয়েছে। অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন দারাজ, পিকাবু, এবং বিক্রয় ডটকমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রিন্টার পাওয়া যায়। এছাড়া, ঢাকার আইডিবি ভবন, এলিফ্যান্ট রোড, এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স মার্কেটে প্রিন্টার কিনতে পারেন। তবে, অনলাইনে কেনার সময় রিভিউ পড়ে নেওয়া এবং বিশ্বস্ত বিক্রেতার কাছ থেকে কেনা ভালো।
বাংলাদেশে প্রিন্টারের দাম বৃদ্ধির কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বিশ্ববাজারে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দাম বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, আমদানি শুল্ক এবং পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। তৃতীয়ত, নতুন প্রযুক্তির প্রিন্টার, যেমন ওয়্যারলেস এবং ইনক ট্যাঙ্ক প্রিন্টার, বাজারে এসেছে, যার দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে, দাম বাড়লেও প্রিন্টারের কার্যকারিতা এবং স্থায়িত্ব বেড়েছে।
উপসংহার
প্রিন্টার এখন শুধু অফিস বা দোকানের জন্য নয়, ব্যক্তিগত কাজের জন্যও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে প্রিন্টার মেশিনের দাম ৬,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৯৫,০০০ টাকার বেশি হতে পারে। ইপসন, ক্যানন, এইচপি, এবং ব্রাদার ব্র্যান্ডের প্রিন্টারগুলো বাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয়। আপনি যদি প্রিন্টার কিনতে চান, তাহলে আপনার প্রয়োজন, বাজেট, এবং বাজার মূল্য ভালোভাবে যাচাই করে নিন। আশা করি, এই প্রবন্ধটি পড়ে আপনি বাংলাদেশে প্রিন্টারের দাম ২০২৫ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন।
যেকোনো তথ্যের আপডেট সবার আগে জানার জন্য উত্তর বিডির সোসাল একাউন্টগুলো অনুসরণ করুন। ধন্যবাদ আপনাকে।