এই লেখাটি পড়ে আপনি সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানতে পারবেন। সালাতুত তাসবিহ একটি নফল নামাজ, যা মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং পাপমোচনের জন্য পড়ে থাকেন। এই নামাজে বিশেষ তাসবিহ বারবার পড়া হয়, যা আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা প্রকাশ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর চাচা হযরত আব্বাস (রা.)-কে এই নামাজ পড়তে উৎসাহ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, এই নামাজ পড়লে আল্লাহ অতীত ও ভবিষ্যতের, ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত সব পাপ ক্ষমা করেন। এই নিবন্ধে সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম, ফজিলত ও গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের ফজিলত অপরিসীম। হাদিসে বলা হয়েছে, যদি সম্ভব হয়, প্রতিদিন এই নামাজ পড়া উচিত। না পারলে প্রতি শুক্রবার, না পারলে মাসে একবার, না পারলে বছরে একবার, আর তাও না পারলে জীবনে অন্তত একবার এই নামাজ পড়তে হবে। কিছু আলেম এই নামাজের হাদিসকে দুর্বল মনে করলেও অনেক বিশিষ্ট আলেম এর ফজিলত স্বীকার করেন এবং এটি পড়ার পরামর্শ দেন। এই নামাজ আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করে এবং মানসিক শান্তি দেয়।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম
সালাতুত তাসবিহ চার রাকাতের নামাজ। প্রতি রাকাতে ৭৫ বার তাসবিহ পড়তে হয়, এবং চার রাকাতে মোট ৩০০ বার তাসবিহ পড়া হয়। তাসবিহটি হলো:
سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি, ওয়াল হামদু লিল্লাহি, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহ পবিত্র, সব প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ সবচেয়ে বড়।
প্রতি রাকাতের নিয়ম
- দাঁড়ানো অবস্থায়: সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা পড়ার পর তাসবিহ ১৫ বার পড়তে হবে।
- রুকুতে: রুকুর তাসবিহ পড়ার পর এই তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে।
- রুকু থেকে উঠে: দাঁড়ানো অবস্থায় ১০ বার তাসবিহ পড়তে হবে।
- প্রথম সিজদায়: সিজদার তাসবিহ পড়ার পর ১০ বার তাসবিহ পড়তে হবে।
- দুই সিজদার মাঝে: বসা অবস্থায় ১০ বার তাসবিহ পড়তে হবে।
- দ্বিতীয় সিজদায়: সিজদার তাসবিহ পড়ার পর ১০ বার তাসবিহ পড়তে হবে।
- দ্বিতীয় সিজদার পর বসে: ১০ বার তাসবিহ পড়তে হবে।
এভাবে প্রতি রাকাতে ৭৫ বার তাসবিহ পড়া হয়। একই নিয়মে চার রাকাত পূর্ণ করতে হবে।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের বিশেষ নির্দেশনা
- দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহুদের আগে তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। তাশাহুদের পর তাসবিহ পড়া যাবে না।
- তৃতীয় রাকাত শুরুর আগে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দাঁড়াতে হবে।
- কোনো রুকনে তাসবিহ ভুলে গেলে পরের রুকনে তা পূরণ করা যাবে।
- সিজদায়ে সাহু হলে তাসবিহ পড়তে হবে না।
- তাসবিহ গণনার জন্য আঙুল চেপে স্মরণ রাখা যায়, তবে আঙুলের গাঁটে গণনা করা নিষেধ।
সালাতুত তাসবিহ নামাজ যেকোনো সময় পড়া যায়, তবে দিনের শুরুতে বা শুক্রবারে পড়া উত্তম। যদি প্রতিদিন পড়া সম্ভব না হয়, তবে মাসে বা বছরে একবার পড়া যেতে পারে। এই নামাজ মনোযোগ দিয়ে পড়লে আধ্যাত্মিক উন্নতি হয়।
হাদিস ও গ্রহণযোগ্যতা
এই নামাজের হাদিস আবু দাউদ (১২৯৭), ইবনে মাজাহ (১৩৮৭) ও সুনানে বাইহাকি কুবরায় (৪৬৯৫) বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আবু দাউদ এটিকে সহিহ বলেছেন। শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানি এটিকে সহিহ হাদিস হিসেবে উল্লেখ করেছেন (সহিহুল জামে, হাদিস: ৭৯৩৭)। তবে কিছু আলেম এটিকে দুর্বল মনে করেন। তবুও এর ফজিলতের কারণে এটি আমল করা উত্তম।
সালাতুত তাসবিহ নামাজ মানুষের মনে আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা জাগায়। এটি ধৈর্য ও মনোযোগ শেখায়। নিয়মিত এই নামাজ পড়লে দৈনন্দিন জীবনে শান্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এই নামাজের তাসবিহ মুখস্থ না থাকলে কাগজে লিখে সামনে রেখে পড়া যায়। তবে মনোযোগ ধরে রাখা জরুরি।
সালাতুত তাসবিহ নামাজ একটি বিশেষ ইবাদত, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। এর নিয়ম সহজ, তবে মনোযোগের প্রয়োজন। এই নামাজ নিয়মিত পড়লে আধ্যাত্মিক জীবন সমৃদ্ধ হয় এবং পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এই নামাজ অন্তত একবার পড়ে এর ফজিলত লাভ করা।
যেকোনো তথ্যের আপডেট সবার আগে জানার জন্য উত্তর বিডির সোসাল একাউন্টগুলো অনুসরণ করুন। ধন্যবাদ আপনাকে।